শনিবার, ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ১০:২২ অপরাহ্ন
মুহাম্মদ আব্দুল বাছির সরদার : আগামি ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে দলীয় প্রতীকে প্রতিদ্বন্দ্বীতা করতে চেয়ারম্যান পদে দিরাই-শাল্লার ১৩টি ইউনিয়নের ৪৬ জন মনোনয়নপত্র নিয়েছেন, এরমধ্যে বিএনপি থেকে ২০ জন ও আওয়ামীলীগ থেকে ২৬ জন। তবে এখন পর্যন্ত কাকে দলীয় মনোনয়ন দেয়া হচ্ছে, তা চুড়ান্ত করতে আরো কয়েকদিন সময় লাগবে বলে উভয় দলেরই সূত্র জানায়।
এবারই দলীয়ে প্রতীকে নির্বাচন হওয়ায় কে পাচ্ছেন দলীয় মনোনয়ন; এ নিয়ে সর্বত্র সরব আলোচনা চলছে। সরকার সাধারণ মানুষকে জাতীয় নির্বাচনের স্বাধ দিতে এবারই স্থানীয় নির্বাচনে দলীয় প্রতীক বরাদ্ধ দিয়েছে। নির্বাচনের দিন যতই ঘনিয়ে আসছে, আলোচনা-সমালোচনা আর পর্যালোচনা চলছে সমান তালেই। নির্বাচনে দলীয় প্রতীক পাওয়া নিয়ে চলছে জোর লবিং, কে হচ্ছেন দলের কাণ্ডারী? চায়ের কাপ থেকে শুরু করে সুশীল সমাজের সদস্যরা একই আলোচনা নিয়ে ব্যস্ত।
ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনের দিন ঘনিয়ে আসার সাথে সাথেই দেশের বড় দুই দলের মনোনয়ন প্রত্যাশীরা তাদের লবিং-তদবির অব্যাহত রেখেছেন। দলের মনোনয়ন পাওয়া যেন সোনার হরিণে পরিণত হয়েছে অনেকের কাছে। বড় দুই দলের অনেকেই তা অর্থের বিনিময়ে নিয়ে আসতেও দ্বিধা করছেন না। ফলে অনেকেই নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বীতা করতে প্রবাস থেকেও দেশে এসেছেন ইতিমধ্যে। কারণ ইউনিয়ন পরিষদের নির্বাচনে বিজয়ী হতে পারলেই ‘কিল্লা ফতেহ’। ফলে দলীয় মনোনয়ন পেতে লবিংয়ের পাশাপাশি অর্থের ব্যবহারও চলছে সমানভাবেই।
এদিকে ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনকে সামনে রেখে বাংলাদেশ আওয়ামীলীগ ও বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল (বিএনপি) তাদের দলীয় মনোনয়নপত্র দিতে শুরু করেছে। ইতিমধ্যে উভয়দলেরই লোকজন আগামি নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বীতা করতে মনোনয়ন লাভের প্রত্যাশায় দলীয় মনোনয়ন কিনেছেন। বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল (বিএনপি) দিরাই ও শাল্লা উপজেলা সূত্রে জানা গেছে, দিরাই উপজেলার ৮টি ইউনিয়নে ২০ জন ও শাল্লা উপজেলার ৪টি ইউনয়নে ৯ জন ইতিমধ্যে দলীয় মনোনয়নপত্র নিয়েছেন। তবে শাল্লা উপজেলার একটি ইউনিয়নে ১ জন ও দিরাই উপজেলার ভাটিপাড়া ইউনিয়ন থেকে ১ জন মনোনয়নপত্র নিয়েছেন এবং রাজানগর ইউনিয়ন থেকে এখন পর্যন্ত কেউ নেননি। অন্য ইউনিয়নগুলোতে একাধিক মনোনয়নপত্র নেয়া হয়েছে। বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল (বিএনপি) দিরাই উপজেলা শাখার সাধারণ সম্পাদক মোঃ আব্দুর রশিদ চৌধুরী জানান, আগামি ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বীতা করতে নির্বাচন কমিশনের বাধ্যবাধকতার কারণে দলীয় প্রতীকে নির্বাচন হবে বিধায় আমরা ইতিমধ্যেই মনোনয়নপত্র দেয়ার প্রক্রিয়া শেষ করেছি, এখন বাকি পরিস্থিতি বুঝে চুড়ান্ত তালিকা করার। বিএনপির একটি বিশ্বস্ত সূত্র জানায়, উপজেলার ৯টি ইউনিয়নে আওয়ামীলীগের মনোনয়ন কাকে দেয়া হচ্ছে, এটি প্রকাশ হওয়ার পরই উপজেলা বিএনপির প্রার্থীও চুড়ান্ত করা হবে।
অন্যদিকে দিরাই উপজেলার ৮টি ইউনিয়ন থেকে ২০ জন দলীয় মনোনয়নপত্র নিয়েছেন। শুধুমাত্র রাজানগর ইউনিয়ন থেকে কেউ দলীয় মনোনয়ন নেননি বলে জানান উপজেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক মোঃ আব্দুর রশিদ। তিনি জানান, রফিনগর ইউনিয়ন থেকে বদরুল মিয়া, নজির মিয়া; ভাটিপাড়া ইউনিয়ন থেকে আফজাল হোসেন; চরনারচর ইউনিয়ন থেকে বর্তমান চেয়ারম্যান রতিকান্ত দাস, শামছুল আলম তালুকদার, রতন মোহন দাস; করিমপুর ইউনিয়ন থেকে মাস্টার আব্দুর রহিম, সেলিম সরদার, জুবের সরদার দিগন্ত; জগদল ইউনিয়ন থেকে আবুল কাসেম, কামরুল মিয়া; সরমঙ্গল ইউনিয়ন থেকে বর্তমান চেয়ারম্যান এহসান চৌধুরী, মোয়াজ্জেম হোসেন জুয়েল; তাড়ল ইউনিয়ন থেকে বর্তমান চেয়ারম্যান নূরুল হক তালুকদার, আবুল বায়েছ, আলী আহমদ; কুলঞ্জ ইউনিয়ন থেকে মিছবাহুজ্জামান চৌধুরী, মুজিবুর রহমান ও আলা মিয়া।
শাল্লা উপজেলা বিএনপির সভাপতি ও উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান গনেন্দ্র চন্দ্র সরকার জানান, উপজেলার ৪টি ইউনিয়ন থেকে দলীয় মনোনয়ন নিয়েছেন ৯ জন। তারা হলেন আটগাঁও ইউনিয়ন থেকে আব্দুল্লাহ আল নোমান, মাসুদ আল কাওসার, নজরুল ইসলাম, জুলফিকার মুনির জনি; হবিবপুর ইউনিয়ন থেকে শৈনেন্দু দাস; বাহারা ইউনিয়ন থেকে বর্তমান চেয়ারম্যান জাকির হোসেন, প্রজেস চৌধুরী; শাল্লা ইউনিয়ন থেকে মোঃ সিরাজুল ইসলাম সিরাজ ও আনিছুর আহমদ চৌধুরী।
আসন্ন ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বীতা করতে দিরাই ও শাল্লা উপজেলা আওয়ামীলীগ থেকে দলীয় মনোনয়নপত্র নিয়েছেন রফিনগর ইউনিয়ন থেকে বর্তমান চেয়ারম্যান ও মদন মোহন কলেজ ছাত্রলীগের সাবেক সভাপতি জাহাঙ্গীর চৌধুরী, উপজেলা আওয়ামীলীগের সাংগঠনিক সম্পাদক এডভোকেট অভিরাম তালুকদার, ইউনিয়ন সভাপতি আল-মামুন, সাধারণ সম্পাদক রেজুয়ান খান, আওয়ামীলীগ নেতা মহসিন মিয়া, শাহিদুল মিয়া; ভাটিপাড়া ইউনিয়ন থেকে বর্তমান চেয়ারম্যান জাহেদুল ইসলাম চৌধুরী, ইউনিয়ন আওয়ামীলীগের সাধারণ সম্পাদক শাহজাহান কাজী, সাবেক ছাত্রলীগ নেতা মাহবুব বখত চৌধুরী; রাজানগর ইউনিয়ন থেকে ইউনিয়ন আওয়ামীলীগের সিনিয়র সহ-সভাপতি সৌম্য চৌধুরী, সাধারণ সম্পাদক শফিকুল ইসলাম শফিক; চরনারচর ইউনিয়ন থেকে সাবেক চেয়ারম্যান জয়কুমার বৈঞ্চব, জগদীশ সামন্ত, পরিতোষ রায়, সৌমেন চৌধুরী; সরমঙ্গল ইউনিয়ন থেকে সাবেক চেয়ারম্যান বাবুল চৌধুরী, আব্দুস সাত্তার, আওয়ামীলীগ নেতা মহানন্দ দাস, হিমাংশু দাস, কানু দাস; করিমপুর ইউনিয়ন থেকে বর্তমান চেয়ারম্যান ও উপজেলা আওয়ামীলীগের সভাপতি আছাব উদ্দিন সরদার, স্বেচ্ছাসেবকলীগ সভাপতি শাহজাহান সরদার; জগদল ইউনিয়ন থেকে বর্তমান চেয়ারম্যান আব্দুস সালাম, ইউনিয়ন আওয়ামীলীগের সভাপতি মিজানুর রহমান (সুবা মিয়া), সাধারণ সম্পাদক ইফতেখার হোসেন মঞ্জু, সহ-সভাপতি আস্তফা মিয়া, আওয়ামীলীগ নেতা বাদশা মিয়া, সিলেট মহানগর যুবলীগ নেতা হুমায়ুন রশিদ লাভলু, জিল্লুর রহমান; তাড়ল ইউনিয়ন থেকে সাবেক চেয়ারম্যান আকিকুর রেজা পুলিশ, ইউনিয়ন আওয়ামীলীগের সাধারণ সম্পাদক আহমদ চৌধুরী; কুলঞ্জ ইউনিয়ন থেকে বর্তমান চেয়ারম্যান আহাদ মিয়া, ইউনিয়ন আওয়ামীলীগ সাধারণ সম্পাদক মিলন মিয়া, আওয়ামীলীগ নেতা মেম্বার ইসহাক মিয়া, মেম্বার মাসুক মিয়া, শিশু মিয়া, ইউনিয়ন যুবলীগ সভাপতি শফিকুল ইসলাম চৌধুরী টিটু, যুবলীগ নেতা এনামুল হক লিলু, যুবলীগ নেতা একরার হোসেন, আবজল মিয়া, জগলু মিয়া, সাবেক চেয়ারম্যান সুফি মিয়ার ছেলে ফজলে রাব্বি।
শাল্লা উপজেলা আওয়ামীলীগের সাধারণ সম্পাদক আল আমিন চৌধুরী জানান, উপজেলার ৪টি ইউনিয়ন থেকে মোট ২৬ জন দলীয় মনোনয়নপত্র নিয়েছেন। তবে চুড়ান্ত সিদ্ধান্ত আসতে আরো কয়েকদিন সময় লাগবে বলে জানান তিনি। শাল্লা উপজেলা আওয়ামীলীগ থেকে যারা মনোনয়নপত্র নিয়েছেন, তারা হলেন শাল্লা ইউনিয়নের বর্তমান চেয়ারম্যান আবুলেইছ চৌধুরী, মোঃ ছত্তার মিয়া, মোঃ আব্দুল হক, জামান চৌধুরী; আটগাঁও ইউনিয়ন থেকে ইউনিয়ন আওয়ামীলীগের সভাপতি খুরশেদ মিয়া, উবায়দুর রহমান, মোঃ সেলিম মিয়া, আবুল কাসেম আজাদ, সুলেমান মিয়া, ইমদাদুল হক, নওশের মনির, হান্নান মিয়া, আজব আলী, আবুল কালাম, আবুবকর সিদ্দিক, মকবুল হোসেন; বাহারা ইউনিয়ন থেকে নরেশ চৌধুরী, কাজল বরণ চৌধুরী, বিধান চৌধুরী, রান্টুলাল নান্টু, রবিন্দ্র বৈষ্ণব, রঞ্জিত বৈষ্ণব; হবিবপুর ইউনিয়ন থেকে বর্তমান চেয়ারম্যান সুবল চন্দ্র দাস, বিবেকানন্দ মজুমদার, অরিন্দম দাস ও প্রেমানন্দ দাস।